ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে নূপুর হত্যা ২০ দিনেও গ্রেফতার হয়নি আসামী

0
11

মোঃ ইনছান আলী জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ ২২-০৯-২০ইং

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দূর্বাকুন্ডু গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী চাঞ্চল্যকর নূপুর হত্যা কান্ডের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হওয়ার ২০ দিন পার হলেও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি। যে কারণে হত্যার শিকার নূপুরের স্বজনরা মামলার ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দুবাই প্রবাসী মোজাম্মেল হকের স্ত্রী নূপুর খাতুন (৩২) ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার পরে নিকটতম প্রতিবেশি মুসার বাড়িতে পাওনা টাকা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হলে রাতে খোঁজাখুজির পর তার কোন সন্ধান মেলেনি। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নূপুরের বসতভিটা সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের বাগান থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। নূপুরকে হত্যা করার সময় তার বাম চোখ উপড়ে ফেলা হয়। তাছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই দিনই কোটচাঁদপুর থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার বাদী নিহত নূপুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা শোভা মামলার এজাহারে এ তথ্য দেন। তবে মামলায় নির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামী করা হয়নি। শুধু প্রতিবেশি মুসাকে সন্দেহ করে লেনদেন জনিত কারণে তার মাকে হত্যা করতে পারে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলা প্রসঙ্গে প্রথম বারের তদন্তকারী কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ইমরান আলম বলেন, নূপুর হত্যা মামলার বাদী শোভা এজাহার গর্ভে নির্দিষ্ট কাউকে আসামী করেননি। মুসা তার মাকে হত্যা করতে পারে বলে সন্দেহভাজন হিসাবে আসামী করা হয়েছে। তবে এ মামলার রহস্য দ্রুততম সময়ের মধ্যেউ উন্মোচন হবে। মামলায় বাদী মুসাসহ বেশ ক’জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও আসামী করেন। যার নম্বর ১। তারিখ ০৪-০৯-২০২০। এদিকে স্থানীয়রা জানান, নূপুর নিখোঁজ হওয়ার রাতে মুসা তার নিজ বাড়িতেই ছিলেন। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি গা ঢাকা দেন। মুসার স্বজনদের দাবী নূপুরের সাথে মুসার ছিল জামাই শাশুড়ী সম্পর্ক। তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেন-দেনও ছিল। সে কারণে তাকে হত্যা করা হবে এমন ধারনা করা ঠিক নয়। নূপুরের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার মা বড় ভাইসহ স্বজনরা দূর্বাকুন্ডু যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হলে মৃতার বড় ভাই নুরুজ্জামান নিজে বাদী হয়ে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা করতে চান। বড় ভাই নুরুজ্জামানের অভিযোগ তাকে মামলার বাদী না করে আসামীর ভাগ্নি শোভাকে বাদী করে পুলিশ মামলা নেয়। এ অবস্থায় নুরুজ্জামান গত ৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী মোজাম্মেল হককে হুকুমের আসামীসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৪৬/২০। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআই ঝিনাইদকে আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে ৪ সেপ্টেম্বর থানা পুলিশের নেয়া মামলাটি পিবিআই সদর দপ্তরের নির্দেশে ৮ সেপ্টেম্বর মামলার যাবতীয় কাগজপত্র তাদের হেফাজতে নেয়। দায়ের হওয়া মামলা দু’টি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। নুরুজ্জামান জানান, হত্যার মূল রহস্য আড়াল করতে শোভাকে মামলার বাদী করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমার বোন নূপুরকে তার স্বামীর নির্দেশে আসামীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে নিজেদের আড়াল করতে মেয়ে শোভাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে স্বামী মোজাম্মেল হক বিদেশ যাওয়ার জন্য নূপুরের পরিবারের কাছে দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। তা দিতে অস্বীকার করায় নূপুরের উপর নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় নূপুর যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে ১৬৮/১৮ ও ১৮২/১৮ দু’টি মামলা করেন। মামলায় স্বামী, ভাসুর ও দেবরদেরকে আসামী করা হয়। স্বামীর পরিবারের লোকজন এক পর্যায়ে মামলা আপোষ মীমাংসা করে নূপুরকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোজাম্মেল বিদেশে চলে যান। এরপর থেকে নূপুর দু’কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় বসবাস করে আসছেন। কিন্তু নূপুরের সাথে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্যদের সাথে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। বাড়িতে থাকা দেবর, ভাসুর ও তার সন্তানেরা নূপুরের উপর প্রতিশোধ নিতে কৌশল আটতে থাকে। সংসার করার জন্য নূপুর সবকিছু মেনে নিয়ে সন্তানদের সাথে বসবাস করছিলেন। এদিকে পরিবারের সদস্যরা নূপুরকে চরিত্রহীনাসহ বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে প্রবাসী মোজাম্মেলের কান ভারী করে। এসব ঘটনার জেরেই আসামীরা তার বোনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ভাই নুরুজ্জামানের দাবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here