তাপস কর,ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।
পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা অথবা তিন কাঠা জমি লিখে না দিলে জমি চাষাবাদ করতে দেবে না। প্রতিপক্ষের এমন হুমকির মুখে অবরুদ্ধ হয়ে আছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বরিল্লা গ্রামের এক কৃষক পরিবার। গত দুই মৌসুম ধরে তারা তাদের ৩২ কাঠা (৩২০০ শতক) জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি সালিশ, মামলা ও পাল্টা মামলা হলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। জানা যায়, বরিল্লা গ্রামের আব্দুল গনি ও তার ছোটভাই দুলাল মিয়া প্রতিবেশী তাইজুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন ও আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ৭-৮ বছর আগে তিন কাঠা জমি কেনেন। পরে সে জমিটি আবার বিক্রেতারা দখল করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে রায় পান গনি। সে জমির দখল নিতে গেলে প্রতিপক্ষরা গনিকে কুপিয়ে জখম করে। দুলাল মিয়ার অবিবাহিত ছেলে হীরা মিয়া রুহুল আমিন ও আনোয়ারুলের বোন অন্তরা জাহান শিখাকে ধর্ষণ করেছে মর্মে থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে দেড় কাঠা জমি লিখে দিয়ে অন্তরাকে বিয়ে করেন হীরা মিয়া। বিয়ের পরই অন্তরার ভাইয়েরা সে জমি তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিতে থাকে। ভয় পেয়ে সে জমি আবার স্বামীর নামে লিখে দেন অন্তরা। এরপর থেকে রুহুল, আনোয়ারুল ও তাদের চাচাত ভাই পাভেল মিয়াগং গনি ও তার ভাইয়ের কাছে পাঁচ লাখ টাকা অথবা তিন কাঠা জমি দাবি করে আসছে। অন্যথায় যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গনিদের ওপর হামলা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই চক্রটি গনিদের দুই কাঠা পানের বরজ ও আখের জমি ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কয়েকটি মামলা, পাল্টা মামলা ও সালিশ হলেও মীমাংসা হয়নি। বরিল্লা গ্রামে গিয়ে দুলাল মিয়াকে বাড়িতে পাওয়া গেলেও গনিকে পাওয়া যায়নি। দুলাল মিয়া জানান, প্রতিপক্ষের সাজানো মামলায় তিনি ৫২ দিন জেল খেটে এখন বাড়িতে অবরুদ্ধ আছেন। গনি জানান, প্রতিপক্ষের কথায় রাজি হচ্ছেন না বলে গত বোরো মৌসুমে জমি চাষ করতে গেলে তারা গনিকে কুপিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠায়। তারা হুমকি দিয়ে বলছে, তাকেসহ তার পরিবারের লোকজনকে যেখানে পাবে সেখানেই হামলা করবে। হীরা মিয়ার স্ত্রী অন্তরা জানান, স্বামীর দেওয়া জমি তার ভাইয়েরা তাদের নামে লিখে নিতে চাপ দিলে সে জমি তিনি ভয়ে আবার স্বামীর নামে লিখে দেন। অন্তরা বলেন, আমি স্বামীর বাড়িতে সুখেই আছি। আমার ভাইয়েরা কেন যে এমন করছে বুঝি না। বাড়িতে গিয়ে রুহুল আমিন ও পাভেল মিয়াকে পাওয়া যায়। তারা বলেন, গনি ও দুলাল মামলাবাজ এবং খারাপ প্রকৃতির লোক। তারাই জমি চাষ না করে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। সালিশে না যাওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, বাড়ির ঘটনা বাড়িতে বসেই মীমাংসা করতে হবে, বাইরে যাব কেন? স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বেশ কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম বলেন, আব্দুল গনি আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। ঘটনা চাঁদাবাজির বলে মনে হচ্ছে না, অন্তরার নামে জমি লিখে দিয়ে আবার সে জমি ফেরত নেওয়াতেই এ বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।