এস এম খলিলুর রহমান হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
হবিগঞ্জে এমপিওভুক্তির ফাইল নিয়ে চরম ভুগান্তিতে হবিগঞ্জের বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিনা কারণে, কখনো সামান্য কারণে ফাইল রিজেক্ট করায় জেলা শিক্ষা অফিসারের সামনে হট্টগোল চিৎকার চেচামেচি করেছে ভুক্তভোগিরা। জেলা শিক্ষা ভবনে এসে ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারীরা ২১ আগষ্ট শুক্রবার রাতে ক্ষোভের বহি প্রকাশ ঘটান। জানা যায়, করোনাকালীন দুর্যোগ মুর্হুতে নতুন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য গত রমজান মাসে অনলাইনে আবেদন চায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু এ সময় শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদন অগ্রায়ন করতে অধিকাংশ আবেদনকারীর থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রুহুল্লাহ। যাদের কাছ থেকে টাকা পাননি তাদের ফাইল রিজেক্ট করেছেন। এমনকি কিছু শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ফাইল রিজেক্ট করেছেন। এরপর গত জুন মাসে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা ২য় বার আবেদনের সুযোগ পেলে এ সময়ও একই আচরণ করেন। চলতি মাসে আবারও তারা আবেদন সুযোগ পেলে জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে নতুন এমপিও ও উচ্চতর গ্রেড মিলে প্রায় ২শত শিক্ষক কর্মচারী অনলাইনে আবেদন করেন। অনলাইনের প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে অগ্রায়ন করেন বিভিন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারেরা। গত ২১ আগস্ট ছিল জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আবেদন অগ্রায়ন করার শেষ দিন। ঐ দিন বিকেলে আবেদনকারী শিক্ষক কর্মচারীরা জানতে পারেন তাদের অনেকের ফাইল রিজেক্ট হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক তাদের ফাইল রিজেক্টের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি সদোত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি ফাইল রিজেক্টের কারণ ফাইলে উল্লেখ করেছেন বলে আর কথা বলতে চাননি। পরক্ষণে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে দেখতে পান ফাইল রিজেক্টের কোন কারণ উল্লেখ নেই। এরপর সন্ধ্যায় আবারও শিক্ষক-কর্মচারীরা জড়ো হন শহরের তিনকোণা পুকুর পারস্থ জেলা শিক্ষা ভবনে। সেখানে ফাইল রিজেক্টের সঠিক কারণ তিনি বলতে চাননি। এক পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাপে তিনি বলেন টাকার অংশ বেশি চাওয়া হয়েছে বলে ফাইল রিজেক্ট হয়েছে। অথচ একই পরিমাণ অংকের টাকা চেয়ে কোনো কোনো শিক্ষকের আবেদন অগ্রায়ন করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে একই প্রকার আবেদন তিনি অগ্রায়ন করেছেন। ফলে শিক্ষকের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তরপ উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আশেরা উচ্চ বিদ্যালয়, বানিয়াচং উপজেলার রত্না উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, নবীগঞ্জের এনএসপি উচ্চ বিদ্যালয় ও আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীর ফাইল রিজেক্ট হয়েছে। ঘটনার সময় তরপ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান তিনি সহ তার স্কুলের ৫জন শিক্ষক কর্মচারী আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ১জন শিক্ষকের আবেদন বাবদ তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একই স্কুলে করণিক মোঃ আব্দুল আউয়ালের কাছ থেকে তিনি ৫শত টাকা নিয়েছেন। অন্য আবেদনের জন্য টাকা দিয়েছেন। কাজ না করায় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখিত সমুদয় টাকা ফেরত চান ভারপ্রাপ্ত ডিইও মোহাম্মদ রুহুল্লাহর কাছে। টাকা ফেরত না দিলে শিক্ষকরা শিক্ষা ভবন ত্যাগ করবেন না বলে জানান। রত্না উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন ফাইল রিজেক্টের যে কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন তার সঠিক ব্যাখ্যা তিনি পাননি। একই রকম আবেদন করে কয়েকজন শিক্ষকের আবেদন অগ্রায়ন করেছেন আর আমাদের ফাইল রিজেক্ট করেছেন। বক্তারপুর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক কামাল হুসেন বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রুহুল্লাহ কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। আর তিনি শিক্ষকদের কথা শুনতে চান না শুধু নিজে বলতে চান। যে কারণে সমস্যা বেধেছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান তিনি ২৪ বৎসর ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক, ৭ বৎসর আগে তিনি রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। তিনি গ্রেড পরিবর্তনের আবেদন করেন। সাথে জেলা শিক্ষা অফিসারকে ৩ হাজার টাকাও দেন। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন আপনাকে একই স্কেলে ১৫ বৎসর চাকুরী করতে হবে। না হলে এ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। তার ফাইলও রিজেক্ট করা হয়। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এভাবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ডিইও মোহাম্মদ রুহুল্লাহ শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। পাশাপাশি এমপিও ভুক্তির নামে তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা প্রতিকার চায়। এছাড়াও উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক বলেন জেলা শিক্ষা অফিসারের অদক্ষতা, টাকার প্রতি লোভ শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করার কারণে দিন দিন জেলা শিক্ষা অফিসের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।